^ সবার উপরে যেতে চান,আমাকে হিট করুন

খোঁজ করুন

Páginas

মানুষের পরিপাক তন্ত্র বা পৌষ্টিক তন্ত্র


মানুষের  পরিপাক তন্ত্রের দুটি অংশ –
পৌষ্টিক নালী বা Alimentary Canal
আনুষঙ্গিক পরিপাক গ্রন্থী

1. মুখগহ্বর (Mouth Cavity  / Oral Cavity)পৌষ্টিক নালীর প্রথম অংশ হলো মুখগহ্বর। এটি দুটি অংশে বিভক্ত।বাইরের তুলনা মূলক ছোট অংশ হল ভেস্টিবিঊল এবং ভেতরের তুলনামূলক বড় অংশ হল প্রকৃত মুখ গহ্বর ।ভেস্টিবিঊল অংশটি মুখছিদ্র দ্বারা বাইরে উন্মুক্ত হয় । মুখগহ্বরের ছাদ টিকে বলে বলে তালু(Palate)  - তালুর সামনের দিকের অংশ টি অস্থি দিয়ে গঠিত একে বলে শক্ত তালু(hard palate) এবং তালুর পিছনের দিকের পেশিময় অংশকে বলে নরম তালু(soft palate)
  1. দাঁত (Teeth)  উপরের এবং নীচের চোয়ালে অর্ধবৃত্তাকারে সারিতে সজ্জিত অবস্থায় দাঁত গুলি অবস্থান করে।প্রতি চোয়ালের প্রতি অর্ধাংশে দাঁতের সংখ্যা ও বিন্যাস একই প্রকারের। মানুষের ক্ষেত্রে দাঁত দুই প্রকারের –অস্থায়ী বা deciduous ও স্থায়ী বা permanent .।শিশুদের ক্ষেত্রে অস্থায়ী দাঁত থাকে কিন্তু বয়স বৃধির সঙ্গে সঙ্গে এই দাঁত গুলি স্থায়ী দাঁত দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।শিশুদের ক্ষেত্রে সর্বমোট দাঁতের সংখ্যা ২০ টি কিন্তু প্রাপ্ত বস্কদের ক্ষেত্রে সর্বমোট ৩২ টি দাঁত থাকে ।জীবন কালে দুইবার দাঁত ওঠার জন্য এই প্রকার দাঁত কে ডাইফায়োডন্ট (diphiodont) দাঁত বলে দাঁতগুলি চোয়ালের গর্তে গাঁথা থাকে বলে এই প্রকার দাঁতকে থেকোডন্ট(Thecodont) বলে। মানূষের চার ধরনের ভিন্ন ভিন্ন দাঁত থাকে বলে একে হেটারোডন্ট বলে । প্রতি চোয়ালের অর্ধাংশে উপস্থিত দাঁত গুলি হল –কামড়ানোর জন্য দুটি কৃন্তক(Incisor =I) , তার পাশে ছেঁড়ার জন্য একটি ছেদক বা শ্বাদন্ত (Canine=C)  ,  এরপরে পেষাই এর জন্য দুটি দুটি পুরঃ পেষক( Premolar=PM) , এবং একেবারে শেষের দিকের তিনটি পেষক (Molar=M)প্রাপ্ত বয়স্ক মানূষের দন্ত সংকেত হল             I  2/2 , 1/1, PM 2/2, এবং 3/3Note :  দন্ত সংকেতে আমরা অর্ধ চোয়ালের উপর ও নীচের চোয়ালের দাঁতের হিসেব পাই । I  2/2   মানে Incisor ba কৃন্তক দাঁত উপ্রের অর্ধ চোয়ালে ২ টি নীচের অর্ধ চোয়ালে ২ টি । যদি  বলা হয় মানুষের মোট কৃন্তক দাঁত কটি ? তবে দন্তসংকেতে পাওয়া হিসেব কে ২ দ্বারা গুন করে নেবে কারন দন্ত সংকেতে অর্ধ চোয়ালের হিসেব থাকে । অর্থাৎ উত্তর ৮ টি ।
    • শিশুদের  দন্ত সংকেত হল             I  2/2 , 1/1, PM 0/0 এবং 3/3
    দাঁতের গঠন –
    দাঁত গুলি চোয়ালের গর্তে প্রোথিত থাকে ।এই প্রকার দাঁতকে  থেকোডন্ট  বলে  ।
    প্রতিটি দাঁতের ৩ টি অংশ থাকে যথা –দন্তচূড়া বা ক্রাঊন ,গ্রীবা বা নেক এবং দন্তমূল বা রূট দাতের মূল গাঁথা থাকে চোয়ালের গর্তে এবং এবং যে অংশ টি বাইরে বেরিয়ে থাকে সেটি হল ক্রাঊন । । ক্রাঊন ও মূলের  মধ্যবর্তী সরু গ্রীবা অংশ টি মাড়ির মধ্যে অবস্থান করে ।

    দাঁতের কেন্দ্রস্থলে একটি গহ্বর থাকে যাকে বলে দন্তমজ্জা বা টুথ ক্যাভিটি বা পাল্প ক্যাভিটি ।এই গহ্বরের মধ্যে শিথিল যোগ কলা , রক্তনালী এবং স্নায়ু রজ্জু থাকে । দন্তমজ্জা টি দন্তমূলের শেষ ভাগে অবস্থিত একটি ছিদ্র দ্বারা উন্মুক্ত হয় যাকে দন্তমূল রন্ধ্র বা অগ্রছিদ্র বা apical foramen  বলে। দাঁতের কঠিন প্রাচীরটি গঠিত হয় তিনটি অংশ দ্বারা –যথা , ডেন্টিন , এনামেল এবং সিমেন্ট । দেন্টিন বা ডেণতাঈণ হোলো ডাঁটেড় পুরু হাড়ের মোট অংশ ,এনামেল দ্বারা দাঁতের দাঁতের ক্রাউনের উপর একটি পাতলা অথচ প্রচন্ড রকম শক্ত আবরনী গঠিত হয়।সিমেন্ট অংশ দন্তমূলকে বাইরের থেকে আবৃত করে রাখে ।এনামেল আমাদের দেহের সবচেয়ে শক্ত অংশ ।
    জিভ বা জিহ্বা-
    মুখগহ্বরের মেঝেতে ঐচ্ছিক পেশী নির্মিত পরিপাকে সাহায্যকারী  সঞ্চরন ক্ষম সংবেদ অঙ্গটিকে জিভ বলে। এটি সরেখ পেশী সলগ্ন শ্লৈষ্মিক স্তর ও গ্রন্থি দিয়ে তৈরী হয়। জিহ্বার উপরিভাগ স্তরী ভূত আঁইশাকার  আবরনী কলা দ্বারা আবৃত থাকে । এতে ছোট ছোট গুটি বিন্যস্ত থাকে , যাদের প্যাপিলা বা পীড়কা বলে।

    প্যাপিলাতে অসংখ্য স্বাদ কোরোক  বা টেস্ট বাড বিন্যস্ত থাকে যাতে স্বাদ সংবেদ কারী গ্রাহক বিন্যস্ত থাকে । জিহ্বায় তিন প্রকার প্যাপিলা বা পীড়কা দেখা যায় –
    (i) সুত্রাকৃতি বা ফিলিফর্ম (filiform)- এদের শীর্ষাংশ সূচালো – জিভের সম্মুখ ভাগে ২/৩ অঞ্জশ জুড়ে এরা  অবস্থান করে – আকারে এরা সবচেয়ে ছোট – সংখ্যায় এরা সবচেয়ে বেশী ।
    (ii) ছত্রাকৃতি বা ফাঞ্জিফর্ম (fungiform) –এদের শীর্ষাংশ সামান্য চ্যাপ্টা , অনেকটা ছাতার মত । জিহ্বার সামনের দিকে এদের অবস্থান ।
    (iii)  সারকামভ্যালেট (Circumvallate) -  জিভের পেছন দিকে  V আকারে সজ্জিত থেকে জিভের পিছনের দিকের এক তৃতীয়াংশ কে সামনের দিকের দুই তৃতীয়াংশ থেকে আলাদা রাখে ।  –সং খ্যা -৮-১২ টি । এরা সবচেয়ে বড় প্যাপিলা ।

    সাধারনত সারকামভ্যালেট ও ফাঞ্জিফর্ম প্যাপিলা গুলির আবরনী কলাস্তরে বিভিন্ন ধরনের স্বাদ কোরোক থাকে , জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টতা ,পশ্চাত ভাগে তিক্ত ।দুপাশে অম্ল ও মধ্য ভাগে লবনাক্ত স্বাদ্ গ্রহনকারী স্বাদ কোরোক থাকে ।
    জিহ্বায় তিন ধরনের গ্রন্থী থাকে –মিউকাস ক্ষরণকারী গ্রন্থী , সেরাস গ্রন্থী ও লসিকা গ্রন্থী । লসিকা গ্রন্তিগুলি মিলিতভাবে জিহ্বার পিছন দিকে লিঙ্গুয়াল টনসিল গঠন  করে ।
    গলবিল বা ফ্যারিংক্স(Pharynx)-
    মুখবিবর এর ঠিক পরেই গ্রাস নালীর সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী সামান্যস্ফীত নলাকার অংশকে গলবিল বলে।সমগ্র গলবিলটি১৩-১৫ সে মি লম্বা এবং  তিনটি অংশে বিভক্ত-
    (i)  নাসাগহ্বরের সঙ্গে সংযোগকারী নাসাগলবিল বা ন্যাসোফ্যারিংক্স
    (ii) মুখবিবরের সাথে সংযোগকারী মুখগলবিল বা অরো ফ্যারিংক্স
    (iii)  স্বরনালীর সাথে সংযোগকারী স্বরগলবিল বা লয়ারিঞ্জোফ্যারিংক্স

    প্রতিপাশের মধ্যকর্ণ থেকে আগত ইউস্টেচিয়ান নালী নাসাগলবিলের পার্শগাত্রে উন্মুক্ত হয়। মুখগলবিলও  স্বরগলবিল অংশদ্বয় পরিপাক্তন্ত্র ও শ্বাস তন্ত্র উভয়েরই সাধারন অংশ ।
    কলাস্থানিক গঠন 
    গলবিলের আবরনী তিনটি কলাস্তর দ্বারা গঠিত –
    (i)  মিউকোসা বা শ্লেষ্মা স্তর  -স্তরীভূত আঁইশাকার আবরনী কলা দ্বারা গঠিত
    (ii) মধ্যস্তর-এটি তন্তুময় কলাস্তর এতে রক্তবাহ ,লসিকাবাহ ও স্নায়ু বিন্যস্ত থাকে
    (iii)  খাদ্যগলাধঃকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অনৈচ্ছিক পেশী এই স্তরে বিন্যস্ত থাকে ।
    গ্রাসনালি (Oesophagus)-
    গলবিলের পরবর্তী ,পাকস্থলী পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৫ সেমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট পৌষ্টিকনালির নলাকার অংশটি হল গ্রাসনালি বা ইসোফেগাস। এটি মধ্যচ্ছদা বা ডায়াফ্রাম ভেদকরে পাকস্থলীর সঙ্গে যুক্ত হয়। গ্রাসনালির উপরের ও নীচের দিকে দুটি স্ফিংটার বা পেশী বলয় থাকে –উপরের পেশীবলয়টিকে বলে ক্রিকোফ্যারিণজিয়াল বা ঊর্ধ গ্রাসনালিয় স্ফিংটার এবং নীচের দিকে যেখানে পাকস্থলী শুরু হয়েছে সেই সংযোগ স্থলে রয়েছে আরএকটি পেশী বলয় বা স্ফিংটার যার নাম কার্ডিয়াক স্ফীংটার ।
    কলাস্থানিক গঠন –
    গ্রাসনালির কলাস্থানিক গঠনে ও পরিপাক নালির অধিকাংশ অংশের ন্যায় চারটি  কলাস্তর দেখাযায়।
    গ্রাসনালির অভ্যন্তরে খাদ্যের বিচলন হয় পেরিস্টালসিস পদ্ধতিতে , একবার দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিই-

    পাকস্থলী বা Stomach
    গ্রাসনালির পরে যে ইংরেজি অক্ষরের মত দেখতে পেশী ও গ্রন্থী যুক্ত স্ফীত থলির মত অংশকে পাকস্থলি বলে । এটি কার্ডিয়াক স্ফিংটার দ্বারা উপরের দিকে গ্রাসনালীর সঙ্গে এবং পাইলোরিক স্ফিংটার দ্বারা নীচের দিকের ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ।স্ফিংটার আর কিছুই নয় স্ফীত পেসী বলয় যা অনেকটা খাদ্যের একমুখী প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের কাজ বা এক অঙ্গ থেকে আর এক অঙ্গে খাদ্য কতটা যাবে তার হারকে নিয়ন্ত্রণ করে । পাকস্থলীর দুটি বক্র পার্শ্ব রয়েছে –গ্রাস নালির পশ্চাদ প্রাচীর পাকস্থলীর বদ্ধপ্রান্তের দিকে যে ছোট অবতল বক্র আকৃতি সৃষ্টি করে তাকে বলে ক্ষুদ্রতর বক্রতা বা Lesser Curvature , অপরদিকে পাকস্থলীর মুক্ত বাম প্রান্ত যে চওড়া উত্তল বক্র আকৃতি সৃষ্টি করে তাকে বলে বৃহত্তর বক্রতা বা Greater Curvature . মানুষের পাকস্থলীতে মূলত তিনটি অংশ দেখা যায় –
    (i) হৃদপ্রান্ত বা কার্ডিয়াক এন্ড- গ্রাসনালীর সগ্লগ্ন অংশ(এই অংশের সঙ্গে লেগে থেকে- হৃৎপিন্ডের অবস্থানের কারনে এই নাম)
    (ii)  ফানডাস- কার্ডিয়াক স্ফিংটার সনলগ্ন উর্ধ বাম দিকে থলির মত অংশটি হল ফান্ডাস
    (iii) দেহ –ফানডাস ও অ্যান্ট্রাম মধ্যবর্তী পাকস্থলীর মূল অংশটি হল দেহ বা বডি
    (iv) পাইলোরিক এন্ড বা প্রণালিকা প্রান্ত (বা অনেকে একে অ্যানট্রাম বলে )-  ক্ষুদ্রান্ত্র এর ডিওডেনাম এর দিকে পাকস্থলীর পাইলোরিক স্ফিংটার সংলগ্ন পাকস্থলীর নীচের দিকের সরু অংশটি হল অ্যান্ট্রাম।
    পাকস্থলীর মিউকাস বা শ্লেষ্মা স্তরে –পাকস্থলী যখন খালি থাকে তখন যে অনুদৈর্ঘ্য  খাঁজগুলি দেখা যায় তাদের বলে রুগি (rugae) বলে । পাকস্থলী খাদ্যদ্বারা পূর্ণ থাকলে এই খাঁজগুলি আর দেখা যায় না ।

    পাকস্থলীর গ্রন্থী সমুহ-
    কার্ডিয়াক গ্রন্থী-হৃদ আপকস্থলীতে অবস্থিত এবং মিউকাস ক্ষরণ করে
    পাইলোরিক গ্রন্থী-প্রণালিকা পাকস্থলীতে অবস্থিত এবং মিউকাস ক্ষরণ করে
    গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থী বা পাচক গ্রন্থী-এরা পাকস্থলির মিউকাস স্তরের অধিকাংশ স্থান জুড়ে অবস্থান করে । পাচক গ্রন্থীতে বিভিন্ন ক্ষরণকারী কোষ বর্তমান-
    (i) পেপটিক কোষ-নিষ্ক্রিয় পেপসিন বা পেপসিনোজেন  ক্ষরণ করে
    (ii) প্যারাইটাল বা অক্সিনটিক কোষ- হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণ করে
    (iii) আরজেন্টাফিন কোষ-কিছু স্থানীয় হরমোন যেমন গ্যাস্ট্রিন, এন্টারোগ্যাস্ট্রোন  ইত্যাদি ক্ষরণ করে
    পাকস্থলীর কাজ-
    -গৃহীত খাদ্যবস্তুকে সাময়িক ভাবে সঞ্চিত রাখে এবং বিচলনের দ্বারা পাকরসের সঙ্গে মিশ্রিত হতে সাহায্য করে ।
    --পাকস্থলীর অন্তঃপ্রাচীরের কোষগুলি বিভিন্ন পাচক রস ক্ষরণ করে ।
    -পাচকরসের HCl খাদ্যবস্তুর সঙ্গে মিশে থাকা বিভিন্ন জীবানু ধ্বংস করে
    -পাকস্থলীতে অবস্থিত পেপসিন ও গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ উৎসেচক এর প্রভাবে যথাক্রমে প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের আংশিক পরিপাক সম্ভব হয়।
    -সামান্য পরিমান জল , লবন ওগ্লুকোজ এবং কয়েকপ্রকার ওষুধ পাকস্থলীতে শোষিত হয়
    -পাকস্থলী থেকে কিছু অধিবিষ (toxin) এবং উপক্ষার রেচিত হয়।
    -পাকস্থলীথেকে ক্ষরিত গ্যাস্ট্রিন ও এন্টারোগ্যাস্ট্রোন নামক হরমোনের প্রভাবে পাচকরসের ক্ষরন বৃদ্ধি পায় ।
    ক্ষুদ্রান্ত্র(Small Intestine)-

    প্রণালিকা পাকস্থলীর শেষ ভাগ থেকে আরম্ভ করে বৃহদন্ত্রের আরম্ভ পর্যন্ত বিস্তৃত বহুসংখ্যক ভাঁজ বিশিষ্ট নলাকার অংশটি হল ক্ষুদ্রান্ত্র।দৈর্ঘ্য-৬-৭ মিটার ,প্রস্থ ৩.৫ থেকে ৪.৫ সেমি ।ডিওডেনাম,জেজুনাম ও ইলিয়াম এই তিনটি অংশ নিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র গঠিত।


    ডিওডেনাম বা গ্রহনী(Deodenum)ক্ষুদ্রান্ত্র এর প্রথম অংশ , যা ২৫-৩০ সেমি লম্বা এবং ইংরেজী U অক্ষরের মত দেখতে । পিত্তাশয় ও অগ্ন্যাশয়ের ক্ষরন যথাক্রমে  সাধারন পিত্তনালী ও অগ্ন্যাশয় নালির মাধ্যমে এসে ডিওডেনামে এর যে যায়গায় উন্মুক্ত হয় সেই স্ফীত জায়গাটিকে অ্যাম্পুলা অফ ভ্যাটার বা ভ্যাটার বর্ণিত স্ফীতি বলে ।
    জেজুনাম(jejunum)-ডিওডেনামের পরবর্তী প্রায় ২-৩ মিটার লম্বা ক্ষুদ্রান্ত্র এর  অংশটি হল জেজুনাম।
    ইলিয়াম (Ileum)-  এটি ৩-৪ মিতার লম্বা যা ক্ষুদ্রান্ত্রএর শেষ অংশ এবং যা বৃহদন্ত্রের সঙ্গে যিক্ত থাকে । ইলিয়াম ও বৃহদ্রন্ত্রের সংযোগস্থলে ইলিওসিকাল বলয়পেশী (Iliocaecal sphincter)  বর্তমান।

    ডিওডেনামের সাব মিউকাস স্তরে ব্রুনার গ্রন্থী নামক শ্লেষ্মা ক্ষরণ কারী গ্রন্থী এবং ইলিয়ামে ওই স্তরে পেয়ার্স প্যাচ নামক লসিকা কলার সমাবেশ লক্ষকরা যায়।ব্রুনার গ্রন্থী ও পেয়ার্স প্যাচ – জেজুনামে থাকে না ।ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকাস স্তরের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল অসংখ্য আঙ্গুলের মত প্রক্ষেপ বা ভিলাই (Villi)এর উপস্থিতি।এরা ক্ষুদ্রান্ত্রের শোষন তল বৃদ্ধি করে ও এবং শোষনে সাহায্য করে ।প্রতিটি ভিলাস এর অভ্যন্তরে লসকা বাহ থাকে , লসিকা বাহকে ঘিরে রাখে রক্ত জালক। ক্ষুদ্রান্ত্রের পাচিত খাদ্য শোষিত হয়ে লসিকা বাহে প্রবেশ করে । ক্ষুদ্রান্ত্রের লসিকা বাহগুলিকে ল্যাক্টিয়েল বলে কারন ফ্যাট শোষনের ফলে এদের অন্তর্গত লসিকা কে সাদা দুধের মত দেখতে লাগে

    সম্প্রসারিত যেসব সরল নলাকার গ্রন্থী ভিলাস এর অন্তর্বর্তী স্থানে মুক্ত হয় তাদের লাইবার কুনের গ্রন্থী বা ক্রিপ্টস্‌ অফ লাইবার কুন বলে ।এরা আন্ত্রিক রস ক্ষরন করে যা পাচনে প্রধান ভূমিকা নেয়।জেজুনাম স্তরের মিউকাস স্তর ভাঁজ হয়ে গোলাকার কার্করিং  এর ভাঁজ বা Fold of Kerckring গঠন করে।
     ক্ষুদ্রান্ত্রের কাজ-
    --ক্ষুদ্রান্ত্র আন্ত্রিক রস ক্ষরণ করে কার্বোহায়ড্রেট,প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের পাচনে অংশ নেয়।এছাড়া যকৃত নিঃসৃত পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় নিঃসৃত অগ্নয়াশয় রসও ক্ষুদ্রান্ত্রেরে বিবরেই খাদ্য বস্তুর পাচন ঘটায় –তাই ক্ষুদ্রান্ত্র হল গৃহীত খাদ্যবস্তুর মুখ্য পাচন স্থল।
    --ক্ষুদ্রান্ত্র পাকস্থলী থেকে আগত আম্লিক পাকমন্ডকে গ্রহন করে এবং তাকে আন্ত্রিক রস ,পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় রসের ক্ষারীয় উপাদান এর সাহায্যে প্রশমিত করে ।
    --ক্ষুদ্রান্ত্রএর বিচলনের ফলে অর্ধপাচিত খাদ্যবস্তুর সঙ্গে উৎসেচকের মিশ্রন , পাচিত খাদ্যের শোষন ও খাদ্যবস্তুর নিম্নদিকে গমনে সহায়তা হয় ।
    --ক্ষুদ্রান্ত্র এ প্রধানত  পাচিত খাদ্যবস্তু , লবন জল, ভিটামিন ইত্যাদি শোষিত হয়।প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের সরল অংশ রক্তজালক দ্বারা ও ফ্যাটের পাচনের ফলে সৃষ্ট সরল অংশ ল্যাকটিয়েল দ্বারা শোষিত হয়।
    --কোনো কোনো ভারী ধাতু , টক্সিন , উপক্ষার ইত্যাদি আন্ত্রিক রসের  মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রের বিবরে উন্মুক্ত হয়
    --
    উপরোক্ত কাজগুলি ছাড়াও ক্ষুদ্রান্ত্র রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে (শর্করা শোষনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় থাকায় , সুস্থ মানূষের শর্করা শোষনের হার ঘন্টায় ১.৮৪ গ্রাম ), দেহের জলসাম্য বজায় রাখায়, ও দেহের অম্ল ক্ষারের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রনে অংশ নেয়।
    বৃহদন্ত্র ( Large Intestine )
    ইলিয়ামের শেষ্ প্রান্ত থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা খাঁজবহুল নলাকার অংশটি হল বৃহদন্ত্র , এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১.৫ মিটার ,ব্যাস-৪-৭ সেমি। বৃহদন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল –(i) বৃহদন্ত্রে  তিনটি অনুদৈর্ঘ্য পেশীব্যান্ড বা টিনিয়া কোলি বর্তমান।(ii) হাউস্ট্রা কোলি নামক ফোলা ফোলা থলির মত অংশ থাকে (iii) সেরাস স্তরে অসংখ্য উপবৃদ্ধি থাকে যাদের অ্যাপেন্ডিসেস এপিপ্লয়সি বলে। বৃহদন্ত্রের ৬ টি অংশ- সিকাম, আরোহী কোলোন , অনুপ্রস্থ কোলোন , অবরোহী কোলোন , সিগময়েড কোলোন  ও মলাশয়
    (i)সিকাম(Caecum)-  থলির ন্যায় আকৃতি বিশিষ্ট উলম্ব ভাবে অবস্থিত এই অংশটি হল বৃহদন্ত্রের প্রথম অংশ । দৈর্ঘ্য ৬ সেমি ব্যাস ৭-৭.৫ সেমি। সিকামের মধ্য পশ্চাদ অংশ থেকে ভার্মিফর্ম অ্যাপেন্ডিক্স নামক নিষ্ক্রিয় অঙ্গ নির্গত হয় যার দৈরঘ্য ৮.৬ সেমি
    (ii) আরোহী কোলোন বা অ্যাসেন্ডিং কোলোন-

    সিকামের পরবর্তী উর্ধমুখী অংশটি হল আরোহী কোলোন।এই অংশের দৈরঘ্য ১৫ সেমি । এটি কটিদেশ থেকে দান উদর গহ্বরে সোজা ওপরের দিকে বিস্তৃত হয়ে যেখানে যকৃতের ডান খন্ডক থাকে তার নীচে শেষ হয় ।
    (iii) অনুপ্রস্থ কোলোন বা ট্রান্সভার্স কোলোন- আরোহী কোলোন ও অবরোহী কোলোনের  মাঝে এটি অনুপ্রস্থভাবে যুক্ত থাকে , দৈর্ঘ্য ২৫-৩০ সেমি ।
    (iv ) অবরোহী কোলোন বা ডিসেন্ডিং কোলোন- অনুপ্রস্থ কোলোন এর পরের থেকে আরম্ভ করে বাম দিকে ক্রমশ নীচের দিকে নেমে আসে , এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০-২৫ সেমি ।
    (v) সিগময়েড কোলোন –ইংরেজি S  অক্ষরের মত দেখতে কোলোনের এই অংশটি অবরোহী কোলোনের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে মলাশয় পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে ।
    (vi) মলাশয় বা রেকটাম – এটি হল সিগময়েড কোলোনের পর থেকে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত অংশ , এই স্থানে মল সাময়িক ভাবে সঞ্চিত থাকে মলাশয়ের পায়ু সনলগ্ন শেষ অংশকে বলা হয় মলনালি । মলাওনালি টি পায়ু ছিদ্র দ্বারা ডেহের বাইরে উন্মুক্ত থাকে ।মলাশয়ের অন্তর্গাত্রে অর্ধচন্দ্রাকৃতি সম্পন্ন , স্থায়ী ও সাধারনতঃ সংখ্যায় ৩ টি ভাঁজ দেখা যায় । এদের হাউস্টনের কপাটিকা (Houston’s  valve) বলে ।
    পাকস্থলী , ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র এই তিনটি অংশকে ছবি থেকে আর একবার রিভিশন দিয়ে নিই-
    বৃহদন্ত্রের মিউকাস স্তরের গবলেট কোষ মিউকাস বা শ্লেষ্মা ক্ষরণ করে এবং বৃহদন্ত্রের অভ্যন্তরকে পিচ্ছিল রাখে।
    বৃহদন্ত্রে অধিকাংশ (৬০-৮০%) জল শোষিত হয়, এছাড়াও গ্লুকোজ , লবন অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কিছু কিছু ওষুধ বৃহদন্ত্রে শোষিত হয় ।
    বৃহদন্ত্রে খাদ্যের অপাচিত অংশ মলে পরিণত হয় । প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০ গ্রাম তরল মন্ড বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে এবং তা থেকে গড়ে প্রায়  ১৩৫ গ্রাম আর্দ্র মল উৎপাদন করে ।
    পারদ, আর্সেনিক , বিসমাথ ইত্যাদি ভারী ধাতু বৃহদন্ত্র থেকে রেচিত হয়ে মলের সঙ্গে নির্গত হয় ।
    বৃহদন্ত্রে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া কলোনি তৈরী করে বসবাস করে এরা ভিতামিন K ও ফোলিক অ্যাসিড  সংশ্লেষ করে যেমন  Escherichia   coli(এসচেরিশিয়া কোলাই ), ও Enterobacter  aerogenes(এনটেরোব্যাকটর অ্যারোজেনেস )বৃহদন্ত্র এ বসবাসকারী বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া রয়েছে এরা বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি কারী জীবানুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । এরা অপাচ্য খাদ্যের উপর ক্রিয়া করে কার্বহাইড্রেট জাতীয় পদার্থ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড , জৈব অ্যসিড , ফ্যাট থেকে ফ্যাটি অ্যাসিড , গ্লিসারল এবং প্রোটিন থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড , অ্যামোনিয়া ইত্যাদি সৃষ্টি করে । এছাড়া ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে ইনডোল ও স্ক্যাটোল ইয়ৎপাদন করে । মলের দুর্গন্ধ সৃষ্টি র জন্য দায়ী স্ক্যাটোল । অ্যামাইনো অ্যাসিড টাইরোসিন ও ফিনাইল অ্যালানিন থেকে ফেনল ও ক্রেসল উৎপন্ন করে ।
    বৃহদন্ত্রে পরিপাকনালির অন্যান্য অংশের মত পেরিস্টলসিস ঘটে না । বেশ কিছু সময় ব্যতিরেকে এর  অনুপ্রস্থ কোলোনে শক্তিশালী পেরিস্টলসিস তরঙ্গ সৃষ্টি হয় ।এই তরঙ্গাকার বিচলন এই অংশের নালী উপাদানকে নিম্নবাহী কোলোনে ও সিগময়েড কোলোনে সঞ্চালিত করে ।
    একবার দ্রুত ক্ষুদ্রান্ত্র , বৃহদন্ত্র এবং পাকস্থলীর মিলিত সংগঠনে চোখ বুলিয়ে নিয়ই-

    পরিপাক গ্রন্থি বা পৌষ্টিক গ্রন্থীসমুহ-
    ১। লালাগ্রন্থি বা স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড-
    মানূষের তিনজোড়া লালাগ্রন্থি রয়েছে । এরা হল একজোড়া প্যারোটিড গ্রন্থি , একজোড়া সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি ও একজোড়া সাব্লিঙ্গুয়াল  গ্রন্থি ।

    ক) প্যারোটিড গ্রন্থি –মানুষের মুখমন্ডলের দুপাশে কর্ণ মূলে এরা অবস্থিত প্রতিটি প্যারোটিড গ্রন্থি থেকে একটি করে  নালি (স্টেনসন  এর নালি বা Stenson’s Duct)নির্গত হয়ে উপরের চোয়ালের ২য় মোলার দাঁতের ছিদ্র পথে মুক্ত হয় । এরা আকারে সবচেয়ে বড় ।
    খ) সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি –মুখমন্ডলের দুপাশে নিম্ন চোয়ালের কোনায় এই গ্রন্থি দুটি অবস্থিত দুটি নালী(হোয়ারটোন এর   নালি বা Wharton’s Duct) জিভের নীচে ফ্রেনুলাম (জিভ যে পর্দার সাহায্যে মখগহ্বরের মেঝেতে য্যক্ত থাকে তাকে ফ্রেনুলাম বলে )নামক শ্লৈষ্মিক পর্দার গোড়ায় মুক্ত হয় । লালা গ্রন্থি গুলির মধ্যে এই গ্রন্থি গুলির ক্ষরণ সর্বাধিক । মোট লালার প্রায় ৭০ % ক্ষরিত হয় এই গ্রন্থি দুটি থেকে ।
    গ) সাব লিঙ্গুয়াল গ্রন্থি- সাব ম্যান্ডিবুলার গ্রন্থির সামনে মুখগহ্বরে মেঝেতে  জিভের নীচে অবস্থিত ।এই গ্রন্থির নালী সাব ম্যান্ডিবুলার গ্রন্থির নালীর পাশেই মুক্ত হয়।
    লালাগ্রন্থির কলাস্থানিক গঠন 
    প্রতিটি লালাগ্রন্থি অনেক গুলি লোবিউল বা উপখন্ডকে বিভক্ত । লালাগ্রন্থিতে দুই প্রকার ক্ষরণ কারী কোষ দেখে যায় –সেরাস কোষ এবং মিউকাস কোষ । প্যারোটিড গ্রন্থিতে সেরাস কোষ , সাব লিঙ্গুয়াল গ্রন্থিতে মিউকাস কোষের ও সাবম্যন্ডিবুলার গ্রন্থিতে উভয় কোষই দেখা যায়। সেরাস কোষের অভ্যন্তরে জাইমোজেন দানা থাকে , যারা গ্রন্থির উৎসেচক ক্ষরণ ঘটায়, মিউকাস কোষের অভ্যন্তরে মিউসিজেন দানা থাকে । সেরাস কোষ থেকে প্রচুর জলীয় তরল নিঃসৃত হয় যাতে প্রচুর উৎসেচক থাকে ।মিউকাস কোষ থেকে গাঢ় চটচটে তরল বা মিঊসিন ক্ষরিত হয় । এছাড়াও লালারসের মধ্যে লাইসোজাইম নামক একপ্রকার উৎসেচক থাকে যা খাদ্যের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া  ধ্বংস করে ।
    যকৃত (Liver)
    যকৃত হল দেহের সর্ব বৃহৎ গ্রন্থি যা একটি সুসজ্জিত জীব রসায়নাগারের সঙ্গে তুলনীয় (well equipped biochemical LabrotaryWell Equipped Human Biocmecal Laboratory)।মানুষের যকৃত টি মধ্যচ্ছদার ঠিক নীচে উদর গহ্বরের উপরের দিকে এবং ডান দিকে অবস্থিত ।

    যকৃতের ওজন প্রায় ১৫০০ গ্রাম বা ১.৫ কেজি। উপর থেকে দেখলে এতে দুটি খন্ডক দেখা যায় – সর্ব্বৃহৎ ডান খন্ডক ও কীলক আকৃতির বাম খন্ডক।মাঝে থাকে ফ্যালসিফর্ম লিগামেন্ট ।আর নীচের তল থেকে দেখলে আরো ২টি অতিরিক্ত খন্ডক দেখা যায় –কোয়াড্রেট (নীচের তলের উপরের দিকে ) ও কডেট (নীচের তলের নীচের দিকে )। এছাড়াও ডান খন্ডকের নীচের তলে একটি খাঁজের মধ্যে ছোট্ট ন্যাসপাতি আকারের (৩০-৩৫ মিলিমিটারের ) একটি থলির উপস্থিতি দেখা যায় একে পিত্ত থলি বলে । যার মধ্যে পিত্ত বা পিত্ত রস সঞ্চিত থাকে । মনে রাকতে হবে পিত্ত কিন্তু তৈরী হয় যকৃতে – যকৃতের ক্ষরণ তথা রেচন জাত পদার্থকে বলে পিত্ত । যকৃতের ডান খন্ড থেকে ডান যকৃত নালি ও বাম খন্ড  থেকে বাম যকৃত নালি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে , যকৃতের বাইরে এই নালি দুটি পরস্পরের সাথে জুড়ে সাধারণ যকৃত নালী গঠন করে ।এই সংযোগ স্থলের কিছুটা নীচে পিত্ত থলি থেকে আসা সিস্টিক নালী এর সাথে জুড়ে সাধারন পিত্ত নালি গঠন করে। যা শেষ পর্যন্ত অগ্ন্যাশয় নালিএ সাথে জুড়ে ক্ষুদ্রান্তের ডিওডেনামে মুক্ত হয়।   যকৃত থেকে ক্ষরিত পিত্ত প্রাথমিক ভাবে পিত্তাশয়ে সঞ্চিত হয় ।
    কলাস্থানিক গঠন-
    যকৃত টিঊনিকা সেরোসা দ্বারা অসম্পূর্ণ ভাবে এবং তার তলায় বিন্যস্ত গ্লিসনের আবরক নামক সুক্ষ্ম যোগকলা দিয়ে তৈরী আবরণ দিয়ে সম্পূর্ণ রূপে আবৃত থাকে ।এই শেষোক্ত আবরনটির কিছু কিছু অংশ যকৃতের মধ্যে প্রবর্ধকের ন্যায় প্রবেশ করে যকৃতকে অনেকগুলি ছোট ছোট খন্ডকে বা লোবিউলে বিভক্ত করে প্রস্থচ্ছেদে প্রতিটি উপখন্ডক অসংখ্য বহুভূজাকার কোষ বা হেপাটোসাইট দ্বারা গঠিত ।

    কোষগুলি কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে সারিবদ্ধ ভাবে সাইকেলের চাকার স্পোকের মত সাজান থাকে ।কেন্দ্রে থাকে কেন্দ্রীয় শিরা বা ইন্টার লোবিউলার শিরা । দুসারি যকৃত কোষের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে সাইনুসয়েড বলে । সাইনুসয়েদ প্রাচীরে একপ্রকার কোষ থাকে যাদের কুফার কোষ বলে ।এরা আগ্রাসি ক্ষমতা যুক্ত (ফ্যাগোসাইটসিস পদ্ধতিতে জীবানূ ধ্বংস করে )।
    অগন্যাশয় বা প্যাংক্রিয়াস-
    এটি অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা অংশের সমন্বয়ে গঠিত একটি মিশ্র গ্রন্থি। এটি ডিওডেনামের   U  আকৃতির খাঁজের মধ্যে অনুভূমিক ভাবে বিস্তৃত।

    অগ্ন্যাশয়ের প্রশস্ত অংশকে মস্তক । তার পরের অংশকে দেহ ও শেষের দিকের সরু অংশকে পুচ্ছ বলে ।অগ্ন্যাশয়ের বহিক্ষরা অংশ নিঃসৃত পাচক রসকে অগ্নয়াশয় রস বলে ।অগ্ন্যাশয়ের থেকে অগ্ন্যাশয় নালি নির্গত হয় এবং সেটি সাধারণ পিত্তনালির সাথে যুক্ত হয়ে ডিওডেনামের গহ্বরে উন্মুক্ত হয় ।
    কলাস্থানিক গঠন-
    অগ্নয়াশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ গঠিত হয় কতগুলি যৌগিক নলাকার গ্রন্থির সহযোগে । এই গ্রন্থির প্রান্তীয় ক্ষরণ কারী অংশ গুলিকে বলে অ্যাসিনি । ক্ষরণ কারীকোষগুলির শীর্ষে জাইমোজেন দানা থাকে ।এদের থাকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। অগ্নয়াশয়ের অভ্যন্তরে কিছু দ্বীপের ন্যায় কোশপুঞ্জ দেখা যায় যাদের কোষগুলি বহিঃক্ষরা অ্যাসিনির কোষ গুলির থেকে ভিন্ন আকৃতির এবং রঞ্জক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ।
    এই কোষ গুলি নালিবিহীন এবং প্রচুর রক্তজালক সমৃদ্ধ । কোষগুলি সমগ্র অগ্ন্যাশয়ের ২-৩% স্থান দখল করে মাত্রএবং অগ্ন্যাশয়ের পুচ্ছ অংশে এদের অধিক পরিমানে দেখা যায় । আবিষ্কারকের নামানুসারে এই কোষগুলির নাম –ল্যাঙ্গারহানস এর দ্বীপ্পুঞ্জ কোষ । এরা অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ । দ্বীপ্পুঞ্জের অভ্যন্তরে প্রধানতঃ তিন ধরনের কোষ দেখা যায় –

    বিটা কোষ (ইনসুলিন হরমোন ক্ষরণ করে )।   Alpha Cell (গ্লুকাগণ  হরমোন ক্ষরণ করে)  এবং ডেল্টা কোষ (সোম্যাটোস্ট্যাটিন নামক  হরমোন ক্ষরণ করে)।
    একবার ছবি থেকে পরপর আবার ঝালিয়ে নিই –দেখি আমরা কতটুকু মনে রাখতে পারছি ।


    লিখেছেনঃ অপু

No comments:

Post a Comment