সকাল থেকে ক্লাস করতে করতে ক্লান্ত রাতুল। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একটানা ক্লাস শেষে এখন আবার Physics ল্যাব এ যেতে হবে। দুইটা থেকে ল্যাব, এখন বাজে ১.৩০।
গতকাল স্যার নিউটনের শীতলীকরণ সূত্রের প্র্যাকটিক্যাল দেখিয়েছিলেন কিন্তু সে অত ভাল বুঝেনি, এটা নিয়ে স্যারের সাথে অনেক তর্কও হয়েছে তার। হাতে এখনো আধঘণ্টা সময় আছে, এই সময়ে গতকালের প্র্যাকটিক্যালটা আরেকটু ভাল করে দেখে নেয়া যাবে। রাতুল ল্যাব এর দিকে রওয়ানা দিল একা।
ল্যাব সম্পূর্ণ ফাঁকা। এখনো কেউ আসেনি, সবাই সম্ভবত লাঞ্চে। সে কাজ শুরু করলো। থার্মোমিটার আনতে গিয়ে সে ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। অবিশ্বাস্য চোখে সে দেখল ফ্লোরে পড়ে আছে প্রফেসরের মৃতদেহ। রাতুল যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আতঙ্কে তার মাথা কাজ করছে না। এখন সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এরই মধ্যে সবাই চলে আসতে শুরু করেছে। সবার চোখে অবিশ্বাস, সামনে পড়ে আছে প্রফেসরের মৃতদেহ আর তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাতুল। সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। হঠাৎ রাতুল চিৎকার করে বললো, ” আমি খুন করিনি,আমি খুন করিনি, আমি আসার আগেই কেউ হয়তো স্যারকে খুন করে পালিয়েছে……”।
কেউ একজন বললো, ” পুলিশকে জানানো দরকার “।
পুলিশ এসে ঘটনার বর্ণনা শুনে রাতুলকে প্রশ্ন করলো,
” তো…………. মিঃ রাতুল, আপনি বলছেন আপনি খুন করেননি, অন্য কেউ খুন করে পালিয়েছে এই তো ? আচ্ছা আপনি কি তাকে পালাতে দেখেছেন? ”
” না, তা দেখিনি , তবে বিশ্বাস করুণ অফিসার আমি নির্দোষ, আমি খুন করিনি ”
” আচ্ছা মিঃ রাতুল আপনার সাথে প্রফেসরের সম্পর্ক কেমন ছিল? মানে আপনাদের মধ্যে কোন রকম মনোমালিন্য কিংবা ঝগড়াঝাঁটি……… ”
” না না, ভাল ছিল ”
একজন বললো, “গতকাল স্যারের সাথে ওর কথাকাটাকাটি হয়েছিল ”
” মিঃ রাতুল আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে ”
” কিন্তু অফিসার, আমি খুন করিনি , আমি আপনাকে প্রমাণ করে দিতে পারবো যে খুনের সময় আমি এখানে ছিলাম না ”
” OK, আপনি আগে তা প্রমাণ করুণ ”
রাতুল গণিতের ছাত্র, ২য় বর্ষে পড়ছে। গণিতকে সে মনে প্রানে ভালোবাসে, সে মনে মনে ভাবল এই গণিতই তাকে বাঁচাতে পারে।
সে তার কাজ শুরু করলো। এক ঘণ্টা ধরে সে কিছু উপাত্ত সংগ্রহ করলো-
(১) ২ টায় প্রফেসরের শরীরের তাপমাত্রা- ৮০ ডিগ্রি ফাঃ
(২) ৩ টায় প্রফেসরের শরীরের তাপমাত্রা -৭৮ ডিগ্রি ফাঃ
(৩) কক্ষ তাপমাত্রা-৭০ ডিগ্রি ফাঃ (ধ্রুবক)
সে জানে, নিউটনের শীতলীকরণ সুত্র অনুসারে, “কোন বস্তুর তাপমাত্রা হ্রাসের হার বস্তু ও তার চারপাশের তাপমাত্রার পার্থক্যের সমানুপাতিক”
অর্থাৎ,
- d T/d t ∝ (T-৭০) যেখানে, T তাপমাত্রা, t সময়
(ঋণাত্মক চিহ্ন দ্বারা তাপমাত্রা হ্রাস বুঝানো হয়েছে)
বা, – d T/d t = k (T-৭০) যেখানে, k সমানুপাতিক ধ্রুবক
বা, d T/(T-৭০) = – k d t
উভয় পক্ষে সমাকলন করে পাই,
l n (T-৭০) = – k t + ধ্রুবক
বা, T-৭০ = A e^(- k t) ………(১)
যেখানে, A = e^(ধ্রুবক) = ধ্রুবক
যখন t =১৪ (২ টা), T = ৮০ তখন, (১) থেকে পাই,
১০= A e^(- ১৪ k)…………(২)
এবং যখন t = ১৫ (৩ টা), T = ৭৮ তখন, (১) থেকে পাই,
৮= A e^(- ১৫ k)………(৩)
(২) কে (৩) দ্বারা ভাগ করে পাই,
১০/৮ = e^(- ১৪ k+১৫ k) = e^( k )
বা, k = l n (৫/৪) = ০.২২৩
k এর মান (২) -এ বসিয়ে পাই,
১০ = A e^(- ১৪ x ০.২২৩)
বা, A = ২২৭.২৪
k ও A এর মান (১)-এ বসিয়ে পাই,
T = ৭০ + ২২৭.২৪e^(- ০.২২৩ t)……………(৪)
শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফাঃ
এখন দেখতে হবে কখন প্রফেসরের তাপমাত্রা ৯৮ ছিলো, অর্থাৎ যখন T=৯৮ তখন t=?
T= ৯৮ হলে, (৪) থেকে পাই,
৯৮ = ৭০ + ২২৭.২৪ e^(- ০.২২৩ t)
বা, t = ৯.৩৯
অর্থাৎ, প্রফেসরের মৃত্যু হয়েছিলো প্রায় ৯ টা ২৩ মিনিটের দিকে।
রাতুল এবার পুলিশকে তার প্রমাণ দেখালো।
” মিঃ রাতুল, ৯ টা ২৩ মিনিটে আপনি কোথায় ছিলেন? ”
” অফিসার আমি তখন ক্লাসে ছিলাম, আপনি আমার ফ্রেন্ডদের জিজ্ঞেস করতে পারেন অথবা স্যারকে ফোন করতে পারেন ”
” ইয়েস অফিসার, রাতুল তখন আমাদের সাথে ক্লাসে ছিল ” তার ফ্রেন্ডরা বললো।
এবার পুলিশ অফিসার স্যারকে ফোন করে নিশ্চিত হলো।
” OK, মিঃ রাতুল আপনি এখন যেতে পারেন ”
রাতুল মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলো। গণিতের ছাত্র হিসেবে তার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হলো। তার মনে এবার স্বস্তি ফিরে এসেছে, পরক্ষনেই আবার মনটা বিষাদে ভরে গেলো স্যারের জন্য। রাতুল স্বপ্নেও ভাবেনি নিউটনের শীতলীকরণ সূত্রের প্র্যাকটিক্যালটা সে তার স্যারের ডেডবডি নিয়েই করবে।
No comments:
Post a Comment