আপনার সাথে আমার দূরত্ব হলোমাত্র ৪.৭৪ ডিগ্রী! আমি মোটামুটি নিশ্চিত, অনেকেই ভাবছেন, এটা আবার কী? বিস্তারিত বলার আগে জানিয়ে রাখি, আগে এই দূরত্ব ছিল ৬ ডিগ্রী। গত সোমবার ফেসবুক তাদের একটি গবেষণা দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, এই দূরত্বকমে গিয়ে দাড়িয়েছে ৪.৭৪!
আজ থেকে বছর তিনেক আগে বিষয়টি আমিও ঠিক মত জানতাম না। প্রথম যখন এই তত্ত্বটি শুনি, অনেকের মতো আমারো চোখবড় বড় হয়ে গিয়েছিল। আমার একবন্ধু কাজ করে প্রফেশনালদের বিখ্যাত সামাজিক নেটওয়ার্ক লিংকডইন -এ। একদিন দুপুরের খাবার টেবিলে যখন তার আরেকটি বন্ধুর সাথে পরিচয় হলো, তখনসে হাসতে হাসতে বললো, তোমারসাথে আমার আগে দূরত্ব ছিল ১ডিগ্রী, আজকে থেকে হলো জিরোডিগ্রী।
আমি তাকে হাসতে হাসতে বললাম, দেখো, আমি জ্যামিতি ছাড়া আর কোথাও ডিগ্রী শিখিনি। আমাকে তুমি বুঝিয়ে বলো।
সে আমাকে তখন যা বুঝিয়ে বললো তার সারমর্ম হলো এই যে, সমাজ বিজ্ঞানে একটি গবেষণা রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে - একটি মানুষ থেকে আরেকটি মানুষের সংযোগ হলো ছয় জন মানুষ। ধরুন, আপনি আমার এই লেখাটি পড়ছেন, কিন্তু আপনার সাথে আমার সরাসরি পরিচয় বা যোগাযোগ নেই। কিন্তু আপনার কোনও বন্ধু হয়তো আমাকে চেনে। কিংবা, আপনার কোনও বন্ধুর বন্ধু হয়তো আমাকে চেনে। যদিআপনি আমাকে সরাসরি চেনেন, তাহলো ডিগ্রী হলো ০। তারপর আপনার একজন বন্ধুর মাধ্যমে যদি আমাকে চেনেন তাহলে আপনার সাথে আমার দূরত্ব হলো১ ডিগ্রী; আর যদি আপনার বন্ধুর বন্ধুর মাধ্যমে যদি আমাকে চেনেন, তাহলে সেটা হলো ২ ডিগ্রী।
এই তত্ত্বের উপর নির্ভর করেতৈরী হয়েছে লিংকডইন। তারা চিন্তা করেছিল, যদি একটি মানুষ থেকে আরেকটি মানুষের দূরত্ব হয় মাত্র ৬ ডিগ্রী, তাহলে তো কাজের ক্ষেত্রেও সেটা ব্যবহার করা সম্ভব। চাকুরীর ক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে পরিচিত থাকলে, খুবসহজেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এবং হচ্ছেও তাই। যারালিংকডইন ব্যবহার করেন, তারানিশ্চই এটা জানেন।
বিষয়টা আমি তার কাছে থেকে বুঝেও ক্ষান্ত হলাম না। বাসায় এসে আবার একটু ঘাটাঘাটি করলাম। আমার আরেক বন্ধু ই-বে (eBay) -এর গবেষক। তার সাথে শেয়ার করলাম। কারণ, বিষয়টা আমার কাছে খুব অদ্ভুত ঠেকছিল। আমার প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, এই গ্রহের যে কোনও একটি মানুষকে আমি পৌছুতে পারবো মাত্র ৬ ছয় জনমানুষের লিংক ধরেই!
আমি কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছিলাম না যে, আমি যদি প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে পৌছুতে চাই, তাহলে ৬ কিংবা তার নীচের কোনও সংখ্যক লোকের মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব! তারপর আমি একটু চিন্তা করে দেখলাম - ব্যাপারটা আসলেই হতে পারে। ক্লিনটনের স্ত্রী হলেন হিলারী, তার বন্ধু হলেন অধ্যাপক ইউনুস, তার আরকেজন বন্ধু হলেন ডঃ আশির, আর আশিরের বন্ধু হলাম আমি। তাহলে তো বিষয়টা কাজ করছে। আমি হয়তো সত্যি সত্যি ক্লিনটেনের কাছে যেতে পারবো না, কিন্তু তত্ত্বটা তো ঠিকই আছে।
১৯৬৭ সালে স্ট্যানলি মিলগ্রাম নামের একজন সাইকোলজিষ্ট এই "৬ ডিগ্রী দূরত্ব" তত্ত্বটি বের করেন। তিনি মাত্র ২৯৬ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন, এবং এই সংখ্যায় উপনিত হন।
বিগত চার দশকে পৃথিবী এগিয়েছে অনেক - পরিবর্তন হয়েছে আমাদের জীবনে, আমাদেরসমাজে, প্রযুক্তিতে। বিশেষ করে সোস্যাল নেটওয়ার্ক জনপ্রিয় হওয়ার পর, একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের দূরত্ব আরো কমে গিয়েছে। ফেসবুক তাদের ৮০ কোটি ব্যবহারকারীর ভেতর এই গবেষনাটি পরিচালনা করেছে। সোমবার রাতে তারা তাদের ওয়েব সাইটে সেই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে ।
বিগত এক মাস ধরে চলে এই গবেষণা। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বের করেন যে, বর্তমানে ফেসবুকে যেভাবে একজন আরেকজনকে চেনেন, তাতে যে কোনও দুটো মানুষের মধ্যে দূরত্ব আগের মতো ৬ ডিগ্রী নেই, সেটা কমে হয়ে দাড়িয়েছে৪.৭৪ ডিগ্রী।
এর অর্থ হলো, আপনি যদি আফ্রিকার একটি মানুষকে খুঁজে বের করতে চান, তাহলে দেখা যাবে সেই মানুষটির কোনও না কোনও বন্ধু, আপনার বন্ধু বা বন্ধুর বন্ধু। এভাবেই মাত্র গড়ে ৪.৭৬ জন বন্ধুকে যোগ করলেই যেকোনও একটি মানুষকে পাওয়া যাবে।
আপনারা ফেসবুকে এই বিষয়টি নিয়ে একটু পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমি নিজেও এটাঅনেকবার পরীক্ষা করেছি - যখন থেকে এই তত্ত্বটার সাথেপরিচিত হয়েছিলাম। হঠাৎ করেই একটা মানুষের নাম নিলাম, তারপর খুঁজে দেখার চেষ্টা করলাম, দেখি তো তাকেকে চেনে? এরপর পেছনের দিকে আসতে থাকলে খুব সহজেই লিংকটা পাওয়া যায়।
আমরা ধারনা বাংলাদেশে এই সংখ্যাটা আরো কম হবে - এমনকি ৪.৭৪-এর চেয়েও কম! এখানে কোথাও কোনও কাজ করতে গেলে, ব্যবসা করতে গেলে, কোনও অফিসে গেলে - যেখানেই যাবেন, সেখানে আগে গিয়ে আমরা খুঁজি পরিচিত কেউ আছেনকি না! কেউ না থাকলে, আশেপাশের কাউকে খুঁজি, তার কেউ আছে কি না! একটা হাসপাতালে যাবেন, পরিচিত ডাক্তার তো খুঁজে বের করতেইহবে! সচিবালয়ে যাবেন, পরিচিত কাউকে লাগবে! স্কুলেবাচ্চাকে ভর্তি করাবেন, খুঁজুন আরেক জনকে! আমরা পরিচিতলোক ছাড়া (কিংবা মামু ছাড়া) কোনও কিছুই চিন্তা করতে পারি না। তাই আমাদের সমাজে এই সংখ্যাটা আরো কম হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের দেশের সমাজ বিজ্ঞানীরা যদি এটা নিয়ে একটু গবেষণা করেন, আমিনিশ্চিত তাদের ফলাফল ৪.৭৪-এর নীচে আসবে।
আপনার কী মনে হয়? :-)
আজ থেকে বছর তিনেক আগে বিষয়টি আমিও ঠিক মত জানতাম না। প্রথম যখন এই তত্ত্বটি শুনি, অনেকের মতো আমারো চোখবড় বড় হয়ে গিয়েছিল। আমার একবন্ধু কাজ করে প্রফেশনালদের বিখ্যাত সামাজিক নেটওয়ার্ক লিংকডইন -এ। একদিন দুপুরের খাবার টেবিলে যখন তার আরেকটি বন্ধুর সাথে পরিচয় হলো, তখনসে হাসতে হাসতে বললো, তোমারসাথে আমার আগে দূরত্ব ছিল ১ডিগ্রী, আজকে থেকে হলো জিরোডিগ্রী।
আমি তাকে হাসতে হাসতে বললাম, দেখো, আমি জ্যামিতি ছাড়া আর কোথাও ডিগ্রী শিখিনি। আমাকে তুমি বুঝিয়ে বলো।
সে আমাকে তখন যা বুঝিয়ে বললো তার সারমর্ম হলো এই যে, সমাজ বিজ্ঞানে একটি গবেষণা রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে - একটি মানুষ থেকে আরেকটি মানুষের সংযোগ হলো ছয় জন মানুষ। ধরুন, আপনি আমার এই লেখাটি পড়ছেন, কিন্তু আপনার সাথে আমার সরাসরি পরিচয় বা যোগাযোগ নেই। কিন্তু আপনার কোনও বন্ধু হয়তো আমাকে চেনে। কিংবা, আপনার কোনও বন্ধুর বন্ধু হয়তো আমাকে চেনে। যদিআপনি আমাকে সরাসরি চেনেন, তাহলো ডিগ্রী হলো ০। তারপর আপনার একজন বন্ধুর মাধ্যমে যদি আমাকে চেনেন তাহলে আপনার সাথে আমার দূরত্ব হলো১ ডিগ্রী; আর যদি আপনার বন্ধুর বন্ধুর মাধ্যমে যদি আমাকে চেনেন, তাহলে সেটা হলো ২ ডিগ্রী।
এই তত্ত্বের উপর নির্ভর করেতৈরী হয়েছে লিংকডইন। তারা চিন্তা করেছিল, যদি একটি মানুষ থেকে আরেকটি মানুষের দূরত্ব হয় মাত্র ৬ ডিগ্রী, তাহলে তো কাজের ক্ষেত্রেও সেটা ব্যবহার করা সম্ভব। চাকুরীর ক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে পরিচিত থাকলে, খুবসহজেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এবং হচ্ছেও তাই। যারালিংকডইন ব্যবহার করেন, তারানিশ্চই এটা জানেন।
বিষয়টা আমি তার কাছে থেকে বুঝেও ক্ষান্ত হলাম না। বাসায় এসে আবার একটু ঘাটাঘাটি করলাম। আমার আরেক বন্ধু ই-বে (eBay) -এর গবেষক। তার সাথে শেয়ার করলাম। কারণ, বিষয়টা আমার কাছে খুব অদ্ভুত ঠেকছিল। আমার প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, এই গ্রহের যে কোনও একটি মানুষকে আমি পৌছুতে পারবো মাত্র ৬ ছয় জনমানুষের লিংক ধরেই!
আমি কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছিলাম না যে, আমি যদি প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে পৌছুতে চাই, তাহলে ৬ কিংবা তার নীচের কোনও সংখ্যক লোকের মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব! তারপর আমি একটু চিন্তা করে দেখলাম - ব্যাপারটা আসলেই হতে পারে। ক্লিনটনের স্ত্রী হলেন হিলারী, তার বন্ধু হলেন অধ্যাপক ইউনুস, তার আরকেজন বন্ধু হলেন ডঃ আশির, আর আশিরের বন্ধু হলাম আমি। তাহলে তো বিষয়টা কাজ করছে। আমি হয়তো সত্যি সত্যি ক্লিনটেনের কাছে যেতে পারবো না, কিন্তু তত্ত্বটা তো ঠিকই আছে।
১৯৬৭ সালে স্ট্যানলি মিলগ্রাম নামের একজন সাইকোলজিষ্ট এই "৬ ডিগ্রী দূরত্ব" তত্ত্বটি বের করেন। তিনি মাত্র ২৯৬ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন, এবং এই সংখ্যায় উপনিত হন।
বিগত চার দশকে পৃথিবী এগিয়েছে অনেক - পরিবর্তন হয়েছে আমাদের জীবনে, আমাদেরসমাজে, প্রযুক্তিতে। বিশেষ করে সোস্যাল নেটওয়ার্ক জনপ্রিয় হওয়ার পর, একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের দূরত্ব আরো কমে গিয়েছে। ফেসবুক তাদের ৮০ কোটি ব্যবহারকারীর ভেতর এই গবেষনাটি পরিচালনা করেছে। সোমবার রাতে তারা তাদের ওয়েব সাইটে সেই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে ।
বিগত এক মাস ধরে চলে এই গবেষণা। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বের করেন যে, বর্তমানে ফেসবুকে যেভাবে একজন আরেকজনকে চেনেন, তাতে যে কোনও দুটো মানুষের মধ্যে দূরত্ব আগের মতো ৬ ডিগ্রী নেই, সেটা কমে হয়ে দাড়িয়েছে৪.৭৪ ডিগ্রী।
এর অর্থ হলো, আপনি যদি আফ্রিকার একটি মানুষকে খুঁজে বের করতে চান, তাহলে দেখা যাবে সেই মানুষটির কোনও না কোনও বন্ধু, আপনার বন্ধু বা বন্ধুর বন্ধু। এভাবেই মাত্র গড়ে ৪.৭৬ জন বন্ধুকে যোগ করলেই যেকোনও একটি মানুষকে পাওয়া যাবে।
আপনারা ফেসবুকে এই বিষয়টি নিয়ে একটু পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমি নিজেও এটাঅনেকবার পরীক্ষা করেছি - যখন থেকে এই তত্ত্বটার সাথেপরিচিত হয়েছিলাম। হঠাৎ করেই একটা মানুষের নাম নিলাম, তারপর খুঁজে দেখার চেষ্টা করলাম, দেখি তো তাকেকে চেনে? এরপর পেছনের দিকে আসতে থাকলে খুব সহজেই লিংকটা পাওয়া যায়।
আমরা ধারনা বাংলাদেশে এই সংখ্যাটা আরো কম হবে - এমনকি ৪.৭৪-এর চেয়েও কম! এখানে কোথাও কোনও কাজ করতে গেলে, ব্যবসা করতে গেলে, কোনও অফিসে গেলে - যেখানেই যাবেন, সেখানে আগে গিয়ে আমরা খুঁজি পরিচিত কেউ আছেনকি না! কেউ না থাকলে, আশেপাশের কাউকে খুঁজি, তার কেউ আছে কি না! একটা হাসপাতালে যাবেন, পরিচিত ডাক্তার তো খুঁজে বের করতেইহবে! সচিবালয়ে যাবেন, পরিচিত কাউকে লাগবে! স্কুলেবাচ্চাকে ভর্তি করাবেন, খুঁজুন আরেক জনকে! আমরা পরিচিতলোক ছাড়া (কিংবা মামু ছাড়া) কোনও কিছুই চিন্তা করতে পারি না। তাই আমাদের সমাজে এই সংখ্যাটা আরো কম হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের দেশের সমাজ বিজ্ঞানীরা যদি এটা নিয়ে একটু গবেষণা করেন, আমিনিশ্চিত তাদের ফলাফল ৪.৭৪-এর নীচে আসবে।
আপনার কী মনে হয়? :-)
chintay poira gelam vai
ReplyDelete